প্রচলিত এবং বিস্তৃত অর্থে বলা যায়, নিজের ইচ্ছা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হল শব্দ। মন্ত্র হল সেই মাধ্যম যার দ্বারা মনের ইচ্ছা বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায়। এটিই হলো সেই মাধ্যম, যার সাহায্যে বিভিন্ন দেবী-দেবতার আহ্বান করা হয়। যাতে দেবী-দেবতা শারীরিক, মানসিক, ভৌতিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশে ভারসাম্য স্থাপিত করে জীবনকে সুখী করে তোলেন। এই শাস্ত্রকে এক পূর্ণ বিকশিত আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে।
তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনের ত্রাণ বা মুক্তিকে মন্ত্র বলা হয়েছে। মন্ত্রের সঠিক নির্বাচন এবং সঠিক উখেত্রেমানুষের শারীরিক, মানসিক, ভৌতিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশে ভারসাম্য স্থাপিত করে এবং জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি স্থাপিত করে।
তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক কখন কোন মন্ত্র ব্যবহার করা উচিত:
- সকল কাজ শুরুর পুর্বে বলতে হবে- ওঁ তৎ সৎ।
- জন্ম সংবাদ শুনলে বলতে হবে- আয়ুষ্মান ভব।
- মৃত্যু সংবাদ শুনলে বলতে হবে- দিব্যান লোকান্ স গচ্ছতু।
- খাবার আগে বলুন- ওঁ শ্রী জনার্দনায় নমঃ।
- বিপদে বলবেন – ওঁ শ্রী মধুসূদনায় নমঃ।
- ঘুমাবার আগে বলতে হবে- ওঁ শয়নে শ্রী পদ্মনাভায় নমঃ।
- গৃহ প্রবেশ মন্ত্র- ওঁ শ্রী বাস্তুপুরুষায় নমঃ।
আরো কিছু প্রনাম মন্ত্র-
মাতৃ প্রণাম মন্ত্র
ভূমেগরীয়সী মাতা স্বাগাৎ উচ্চতর পিতা
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদগি গরিয়সী।
গর্ভ ধারণ্যং পোষ্যভাং পিতুমাতা বিশ্বস্তে।
সর্বদেব সরুপায় স্তন্মৈমাত্র নমঃ নমঃ।।
পিতৃ প্রণাম মন্ত্র-
পিতাস্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহিপরমংতপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে
সর্বদেবতা নমঃ পিতৃ চরণেভ্য নমঃ॥
মহাদেব প্রনাম মন্ত্র-
নমঃ শিবায় শান্তায় কারুণাত্রায়
হেতবে নিবেদিতামি চাত্মানং ত্বং গত্বিং পরমেশ্বর॥
শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম মন্ত্র-
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে।
গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে॥
নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমঃ নমঃ॥
বিষ্ণু প্রনাম মন্ত্র-
ওঁ ত্রৈলোক্য পূজিত শ্রীমন সদা বিজয় বর্দ্ধন।
শান্তিং কুরু গদাপানে নারায়নায় নমোহস্তুতে॥
সূর্য প্রণাম মন্ত্র-
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহষ্মি দিবাকরম্॥
গুরু প্রণাম মন্ত্র-
অখণ্ড মণ্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম।
তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ॥
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ॥
গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেব মহেশ্বর।
গুরুরেব পরংব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ॥
গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র-
ওঁ ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ॥
দুর্গা প্রণাম মন্ত্র-
সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সবার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে॥
গায়ত্রী প্রণাম মন্ত্র-
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি,
ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ॥
বিশ্বকর্মা প্রণাম মন্ত্র-
দেবশিল্পীন মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টফলপ্রদ॥
তুলসী প্রণাম মন্ত্র-
ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসী দৈব্যে প্রিয়াঐ কেশবস্য চঃ।
কৃষ্ণভক্তিপদে দেবী সত্যবত্যৈ নমঃ নমঃ॥
গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র-
ওঁ ব্রহ্মাণ্ড দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চঃ।
জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ॥
মহাদেবের মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র-
ওঁ ত্রম্বকং য্জামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারকামিব বন্ধনান মৃতৌমোক্ষীয় মামৃতাত॥
দেহ শুচীর মন্ত্র-
ওঁ অপবিত্র পবিত্রোবাং সর্বাবস্থান গতহ্বপিবা।
যৎ সরেত পুণ্ডরিকাক্ষং স বাহ্য অভ্যান্তরে শুচি॥
পাপোহং পাপ কর্মাহং পাপাত্মা পাপ সম্ভাবান্।
ত্রাহি মাং পুণ্ডরীকাক্ষং সর্ব পাপো হরো হরি॥
সরস্বতী প্রণাম মন্ত্র-
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে।
কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে॥
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে।
ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে॥
লক্ষী প্রনাম মন্ত্র-
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্ব্বত পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমহস্তুতে॥
শ্রীবিষ্ণু প্রণাম মন্ত্র- (অশ্বথ বৃক্ষমূলে জল দিয়ে)
ওঁ অশ্বত্থ বৃক্ষরূপোহসি মহাদেবেতি বিশ্রুতঃ।
বিষ্ণুরপধরোহসি ত্বং পুণ্যবৃক্ষ নমোহস্ত্ত তে॥
শ্রী পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম মন্ত্র-
পঞ্চতত্ত্ব আত্মকং কৃষ্ণং ভক্তরূপ স্বরূপকম্।
ভক্ত অবতারং ভক্তাখ্যাং নমামি ভক্ত শক্তিকম্॥
মা কালীর প্রনাম মন্ত্র-
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রা কালী কপালিনী।
দূর্গা শিবা সমাধ্যার্তী সাহা সুধা নমস্তুতে॥
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থনা–
ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ।
পূর্ণং ভবতু ত্বৎ সর্বং ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন॥
মন্ত্র হীনং ক্রিয়া হীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন।
যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তূমে॥