জ্ঞান যখন বৃদ্ধি পায় তখন আপনার আত্নবিশ্বাস বেড়ে যায়। জ্ঞান যখন বৃদ্ধি পায় তখন আপনার ইগো মানে মানুষের বলা ছোট ছোট কথা আপনার মনে নেয়ার অভ্যাস চলে যায়। কারন জ্ঞান আপনাকে এই বিষয় অনুভব করায় যে আমরা এই পৃথিবীকে যতটুকু ভাবি, এই ব্রহ্মান্ড কে যতুটুকু ভাবি এটি তার থেকেও কয়েক লক্ষ গুন বড় এবং বহু রহস্য কে এরা লুকিয়ে রেখেছে। আর মানুষের বুদ্ধি কেবল মাত্র তত টুকুই কাজ করবে, ততটুকুই ভাববে এবং বুঝবে যতটুকু তার বুদ্ধি আর এই বুদ্ধিকে চালনা করা শরীর। এবার প্রশ্ন হলো-
একজন জিনিয়াস এবং একজন সাধারন ব্যাক্তির মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে?
পার্থক্য হলো তাদের ইগো, অভিমানের। আপনি দেখবেন যার কাছে যত জ্ঞান আছে হয়তো সেই ব্যাক্তি খুব শান্ত স্বভাবের হয় বা খুবই অহংকারী হয়। যে শান্ত থাকে সে নিজের মনকে খুব ভালোভাবে জানে, তার মস্তিষ্কে কি চলছে সেই বিষয়ে ওই ব্যাক্তি সতর্ক থাকে।
কিন্তু একজন বোকা ব্যাক্তির এই বিষয়ে কোনো জ্ঞানই থাকে না। ভালো করে খেয়াল করলে বুঝবেন একজন ছোট শিশু আমাদের কাছে যদি তার দুষ্টু কোনো প্রশ্ন করে যেমন মানুষ কেনো উড়তে পারেনা, গাছ কেনো চলাফেরা করতে পারেনা আমরা যদি তাদের এসব কথা শুনি তাহলে কিন্তু আমরা রাগ করিনা বরং আমরা মুচকি হেসে দি। কিন্তু কেন??
কারন তার প্রশ্ন গুলির বিষয়ে আমাদের কাছে জ্ঞান আছে। সে যেসব বলেছে তার ব্যাপারে আপনি আগে থেকেই সবকিছু জানেন। কিন্তু, যখন কোনো ব্যাক্তি আমাদের কোনো প্রশ্ন করে আটকানোর চেষ্টা করে অথবা অপমান জনক কথা বলে তাহলে যে ব্যাক্তির জ্ঞান কম সেই ব্যাক্তির ইগো হার্ট হয়ে যাবে, সে ভাবতে থাকবে “সে কিভাবে আমাকে এসব কথা বললো, কি কিভাবে সবার সামনে আমাকে অপমান করলো”
এখন ভাবুন আপনার জ্ঞান অনেক বেশি, কিন্তু সেই ব্যাক্তির এই সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই যে আপনাকে অপমান করলো। সে যদি বলে “আপনি তো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর ব্যাপারে কিছুই জানেন না” কিন্তু আপনি মনে মনে ভাববেন যে “ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর ব্যাপারে আমি সবাইকে খুব সুন্দর করে বুঝানোর সক্ষমতা রাখি”
সহজ ভাষায় যদি বলি, আপনার মধ্যে যদি জ্ঞান না থাকে তাহলে আপনার মধ্যে অভিমান, রাগ, দুঃখ, হিংসে, প্রতিশোধ এইগুলি বেশি হয়ে যাবে। এবং যদি আপনার মধ্যে জ্ঞান থাকে এবং আপনি জানেন যে আপনি কি পারেন এবং কি পারেন না, তো তখন আপনিও সেই কথায় মুচকি হেসে দেবেন এবং তাকে ইগ্নোর করবেন তাইনা?
কারন যখন আমাদের কোনো বিষয়ের উপর জ্ঞান থাকে এবং আমরা জানি যে আমার কাছে এই বিষয়ের উপর যথেষ্ট জ্ঞান আছে আমরা তখন লোকজনের কথাকে অতোটা মনে নেই না। আমরা তাদের কথাকে ইগ্নোর করার চেষ্টা করি এবং জীবনে এগিয়ে যাই।
অর্থাৎ আপনার জ্ঞান অর্জন করা খুবই জরুরি। আপনার জ্ঞান এর পরিধি কে বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। এই জ্ঞানই আপনাকে লোকজনের ছোট ছোট কথা মনে নেয়া থেকে বাধা দিবে। তাহলে এখন প্রশ্ন দারাচ্ছে
জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে কিভাবে?
আপনার জ্ঞান বৃদ্ধিপেতে শুরু করবে তখন যখন আপনি শুনতে শিখবেন। শুনার পর কথাটিকে ফিল্টার করে দিন যে কোন কথাকে রাখতে হবে এবং কোন কথাকে মন থেকে মুছে দিতে হবে। যদি আপনি মনেকরেন আমি সব জানি, আমি সব পারি তাহলে নিশ্চিন্তে বুঝে নিবেন আপনার জ্ঞান এর পরিধি অনেক কম। এখনো অনেক কিছু শিখতে বাকি আছে আপনার।
আমি সব জানি, এই অ্যাটিটিউড টি হলো অজ্ঞানী হওয়ার সবথেকে বড় সংকেত। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলতেন
জ্ঞানের সবথেকে বড় শত্রু হলো নিজেকে সর্বজ্ঞানী মনেকরার ভ্রুম।
যখন আমরা ভাবি, আমরা সব থেকে জ্ঞানী তখন আমরা নিজের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে নিজের ভেতরে থাকা সামান্য জ্ঞান দিয়েই হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করি। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, রান্না করার ক্ষেত্রে যদি আপনার ডালের রেসিপি জানা থাকে তাহলে সেই রেসিপি দিয়ে তো আপনি আর মাংস রান্না করতে পারবেন না। তাহলে অন্য খাবার কে অন্যভাবেই রান্না করতে হবে। ঠিক সেভাবেই জীবনে আসা আলাদা আলাদা সমস্যা কেউ আমাদের আলাদা ভাবে ট্যাকেল করতে হয়। নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে হয়, নিজের জ্ঞানের পরিধি কে একটু বাড়াতে হয়।
যদি আপনি একই ভাবে সকল সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করবেন তাহলে সমস্যা তো সমাধান হবেই না, তার সাথে আপনার জ্ঞানও বৃদ্ধি পাবে না। যেসব জায়গা থেকে আপনি হেট পাচ্ছেন, যেসব যায়গা থেকে আপনার কনফিডেন্স কমে যাচ্ছে, যেসকল মানুষ আপনাকে ডিমোটিভেট করছে, তাদের কথা শুনে নিজের মধ্যে সেই গুন কে বাড়িয়ে দেবেন না। যখনই আপনি লোকজনের হেট, ডিমোটিভেশন থেকে দূর হবেন তখনই আপনার মনেহবে তারা তো অনেক পেছনে থেকে গেছে।
এইজন্য প্রতিটি কথাকে মনে নিয়ে নেয়ার পরিবর্তে জ্ঞানী হন। লোকজনের কথাকে মনে নিয়ে নিলে আমরাই দুঃখ পাই মানে আপনি একাই কারো কেয়ার করছেন, একাই হার্ট হচ্ছেন আবার আপনার মনেই এটি আঘাত করে আপনাকেই ছোট অনুভব করাচ্ছে। এইজন্য আপনি এসব বিষয়কে ইগ্নোর করুন। নিজেকে সফল বানানোর চেষ্টা করুন। জ্ঞান আপনাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে যেখান থেকে আপনি এইসব তুচ্ছ বিষয়কে পিপড়ের মত ছোট দেখতে পাবেন। এইজন্য জ্ঞান বাড়ান, যা আপনাকে আপনার সফলতার চুড়ান্ত স্থানে নিয়ে যাবে।