জ্ঞান অর্জন করা বুদ্ধিমত্তা নয়, আসল বুদ্ধিমত্তা হলো কল্পনা শক্তি থাকা।
এই কথাটিকে সে বলে গেছেন যাকে, পৃথিবীর সবথেকে বুদ্ধিমান মানুষ বলা হয়।
সেই ব্যাক্তিটি হলো আলবার্ট আইন্সটাইন।
আজকের আর্টিকেলে আপনি জানতে চলেছেন এমন ১০টি খারাপ অভ্যাস যা আপনার বুদ্ধিমত্তাকে কমিয়ে দিচ্ছে। যদি আপনি এই দশটি অভ্যাস থেকে মুক্তি পেয়ে যান, তাহলে আপনি আজকের তুলনায় অনেকগুন বুদ্ধিমান হয়ে যাবেন।
যদি আপনি একজন ছাত্র হন, তাহলে আপনি আপনার পড়াশোনা কে ভালোভাবে মনে রাখতে পারবেন। এক্সামে টপ করতে পারবেন। যদি আপনি একজন বিজনেস ম্যান হন তাহলে আপনি আপনার বিজনেস কে ভালোভাবে প্ল্যান করতে পারবেন। এক কথায়, যদি আপনার বুদ্ধিমত্তা বেশি হয় তাহলে আপনি আপনার আশেপাশের সকল মানুষকে পেছনে ফেলে জিবনে এগিয়ে যেতে পারবেন।
স্যার আইজ্যাক নিউটন বলতেন “আমরা দেয়াল তো বানাই ঠিকই, কিন্তু পিলারই বানাই না”। আর বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য এই দশটি পিলার খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তাহলে এই দশটি নিয়ম কে মনোযোগ এর সাথে অবশ্যই পড়বেন-
১। প্রতিটি বিষয়কে মনে নিয়ে নেয়া-
যদি আপনি কারো বলা কোনো কথা মনে নিয়ে নেন, এবং তার জন্য মন খারাপ করলেন অথবা রাগী হয়ে যান তাহলে চলবে না। কারন এই অভ্যাস আপনার মস্তিষ্কের জন্য, আপনার ব্রেইন-পাওয়ার এর জন্য খুবই খারাপ একটি অভ্যাস।
যদি আপনি কারো বলা কথা আপনার মনে নিয়ে নেন তাহলে সেই কথা ভাবতেই আপনার প্রচুর সময় লেগে যাবে, যে সময়টিতে আপনি অভিনব কিছু ভাবতে পারতেন, নিজের জিবনের সমস্যার সমাধান গুলোকে খুজতে পারতেন। কিন্তু সেই সময়টি লোকজনের দ্বারা আপনাকে বলা কথা ভাবতেই খরচ করে ফেলছেন। এইজন্য এই অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
২। অতীতের স্মৃতিতে আটকে থেকে যাওয়া-
আপনি কি আপনার অতিত নিয়ে বেশি ভাবেন? দেখুন আমরা মানুষ, এক হয়েও কিন্তু সকলে ভিন্ন, আমাদের চিন্তাভাবনা ভিন্ন আর আমাদের অতীত ও ভিন্ন। অতীত থেকে আমরা কেবল মাত্র দুইটি কাজ করতে পারি,
(i) অতীত কে মনেকরে দুঃখ পাই
(ii) অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাই
এজন্য আমাদের নিজের চিন্তা ভাবনা কে অতীত থেকে মুক্ত করে দিতে হবে। এতে কি হবে? একবার ভাবুন, অতীতকে ভাবতে কিন্তু আমাদের কম সময় নষ্ট হয়না। সময়কে বাদ দিলেও আমাদের প্রচুর মানসিক শক্তিও নষ্ট হয়, মন খারাপ হয়ে যাই। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, যেই সময়ে আপনি কতকগুলো প্রডাক্টিভ কাজকে করতে পারতেন, কাজ না করলেও প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা তো করতে পারতেন!
৩। সবসময় অতিরিক্ত চিন্তিত থাকা-
আপনি কি প্রয়োজনের থেকে বেশি টেনশন করেন? পরিক্ষায় কম মার্ক পেলেন টেনশন চলে এলো, কেউ কিছু বলে দিলো টেনশন শুরু হলো, কোনো মেয়ে কথা বলছে না, তাই টেনশন চলে আসলো, মনেহলো যে জীবন শেষ সবকিছু শেষ। টেনশন, প্রচুর টেনশন নিয়ে বেচে থাকাকে জীবন উপলব্ধি করা বলেনা!
আপনি ভাবতে পারেন এটা বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। তবে চিন্তামুক্ত হওয়া কিন্তু এতোটাই কঠিন না। মাঝেমধ্যে আমরা কোনো জিনিসের ব্যাপারে এতোটা ভেবে নেই যতটা সেই জিনিসটা এতো চিন্তা-ভাবনার যোগ্যই না। একটি ছোট পাথরকে চোখের কাছে রাখলে বড় দেখাবে, কিন্তু পাথরটিকে একটূ দূরে রাখলে একে ছোট দেখাবে। সেভাবে নিজের প্রবলেম কে একটু দুর থেকে দেখুন।
৪। রুটিন না মেনে চলা-
আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন থাকে যার না ঘুমানোর টাইম ফিক্স, না ঘুম থেকে উঠার টাইম ফিক্স। যখন মনে হয় ঘুমিয়ে যায়, যখন ইচ্ছা হয় তখন ঘুম থেকে উঠে যায়, যখন ইচ্ছে হলো খাবার খায় আবার যখন ইচ্ছে তখই স্নান করে এবং মোবাইল চালাতে চালাতেই দিন শেষ করে ফেলে। এর থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং নিজের সুবিধামতো রুটিন বানিয়ে তা রেগুলার ফলো করে চলতে হবে।
৫। সবসময় অভিযোগ করতে থাকা-
আমরা অনেক সময় এমনটা ভেবে থাকি, আমরা নিজেরা যেমনই হইনা কেনো আমাদের জীবনের সবকিছু যেন পারফেক্ট হয়, বন্ধু যেন পারফেক্ট হয়, ফেমিলি যেন পারফেক্ট হয়, গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড যেন পারফেক্ট হয়। মানে আমরা যেমনই হইনা কেন সৎ, অসৎ, ভালো, মন্দ আমরা মনেকরি আমরা জীবনের সবকিছুকেই যেন পার্ফেক্ট পাই।
মানে বুঝতে পেরেছেন তো? আমি কমপ্লেইন বা অভিযোগের কথা বলছি। আর এই অভিযোগ করতে করতে ব্রেইনে এতটা নোংরা জমে যায় যে, আমরা যখনই নতুন কিছু দেখি সেখানেই কিছু ভুল দেখতে পাই। এই অভিযোগ করার অভ্যাসের দ্বারা আপনি কিছুটা তো সাটিস্ফাইড হন ঠিকই কিন্তু এটি আপনার মস্তিষ্ক এবং সৃজনশীলতা দুইটিকেই নষ্ট করে দেয়।
৬। প্রয়োজনের থেকে বেশি ভাবা-
মাঝে মাঝে আমরা একটি ঝামেলা থেকে মুক্তি না পেতেই আরেকটি ঝামেলায় পড়ে যাই। এক সমস্যার সমাধার করতে না করতেই আরেকটা সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে যাই। আর ভাবতে ভাবতে অতিরিক্ত চিন্তা করার অভ্যাসকে বানিয়ে নেন। দেখুন, চিন্তা-ভাবনা করা ভালো, এই ভাবনাই তো আমাদের অন্যান প্রানীদের থেকে আলাদা করে। কিন্তু এর একটি লিমিট রয়েছে।
চিন্তা করা আর অতিরিক্ত চিন্তার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য আছে। অভার থিংকিং আপনার মস্তিষ্কে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। অবাক করার কথা হলো, এই অভার থিংকিং এর কমান্ডার আপনি নিজেই। তাই অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করুন।
৭। সবাইকে খুশি করার চেষ্টা-
আপনি কি অন্যদের খুশি করতে খুব ভালোবাসেন? হ্যা এটা অনেক ভালো গুন কিন্তু অপরকে খুশি করতে গিয়ে নিজের সময় ও শান্তি নষ্ট করা মস্তিষ্ককে দুর্বল করার অন্যতম একটি অভ্যাস। এদিকে নিজের জীবনের বারোটা বেজে আছে, নিজের জীবনই ঠিকভাবে চলছে না আর অপদিকে আপনি অন্যকে খুশি করার চেষ্টা করছেন, এই ভয়ানক অভ্যাসটি, খুব ভয়ানক ভাবে আপনার মস্তিষ্ক এবং আপনার সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই অন্যকে ইমপ্রেস কিম্বা খুশি করার জন্য নিজের সময়কে নষ্ট করবেন না।
৮। মোবাইল ফোনের নেশা-
আমাদের পৃথিবীতে ডিস্ট্রাকশন এর অভাব নেই। লক্ষ লক্ষ ডিস্ট্রাকশন আছে পৃথিবীতে। আর এর মধ্যে সবথেকে বড় ডিস্ট্রাকশন হলো আপনার মোবাইল ফোনটি। সকালবেলা ফোন হাতে নিয়ে ডাটা কানেকশন অন করার পর নোটিফিকেশন নামক ডিস্ট্রাকশন আপনার সারা দিনকে নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। এজন্য একটি লিমিটে আপনার প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যাবহার করুন। মোবাইল ফোন যেন আপনাকে ব্যাবহার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং সচেতন হন।
৯। রাগ-
আমাদের জীবনে শুক্তির অনুভব তখনই হয় আর প্রয়োজন তখনই পরে যখন রাগের জন্ম হয়। নিজেকে বুদ্ধিমান, শক্তিশালী, জ্ঞানী, অভিমানী তখনই মনেহয় যখন রাগ আসে। কিন্তু চরমসত্য হলো এইযে, আপনি যতবেশি রাগ করবেন তত বেশি আপনার বুদ্ধিভ্রষ্ট হতে থাকবে। আর যতই নিজের মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখবেন ততই বুদ্ধিমান আপনি হতে থাকবেন। রাগ এবং অভিমান এই দুটি এমন গুন যা মানুষের বুদ্ধিকেই নয় মানুষের জীবন কেও নষ্ট করে দেয়।
১০। উপরের প্রত্যেকটি নিয়ম মানা-
উপরের সবকিছু যদি সুন্দর ভাবে মেনে না চলেন তাহলে আজই এসব মেনে চলতে শুরু করুন। এটই হলো আমাদের দশ নাম্বার অভ্যাস। এসব নিয়ম মেনে চলতে পারলে আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে যার ফলে আপনি আপনার জীবনে সক্ষম ভাবে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।